Header Ads

রোহিঙ্গা নির্মূলে’নারী ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী !!



মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ‘জাতিগতভাবে নির্মূল করার’ অভিযানে দেশটির সেনাবাহিনী নারী ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে বলে আলামত মিলছে।

জাতিসংঘের চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের বরাত দিয়ে রয়টার্স বলছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সহিংসতার মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমদের মধ্যে এমন কয়েক ডজন নারী চিকিৎসা নিয়েছেন, যাদের আঘাতগুলো নৃশংস যৌন হামলার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু এই মুসলিম নারীরা বার বার বলাৎকার ও দলবদ্ধ ধর্ষণের যে অভিযোগ এনেছেন, সেগুলোকেই জোরালোভাবে সামনে এনেছেন এই চিকিৎসরা। কিছু ক্ষেত্রে রয়টার্সের পর্যালোচনা করা মেডিকেল নথির সঙ্গেও এগুলো মিলে যায়।
এসব অভিযোগকে সেনাবাহিনীকে কলংকিত করার সাজানো প্রপাগান্ডা বলে উড়িয়ে দিয়ে পাল্টা মিয়ানমারের কর্মকর্তারা বলছেন, তার সন্ত্রাস দমনের বৈধ অভিযান চালাচ্ছে এবং বেসামরিক মানুষের জীবন রক্ষা করা আদেশ পালন করছে। অভিযোগ নিয়ে কেউ তাদের কাছে গেলে তারা তদন্ত করে দেখবেন বলে মিয়ানমারের নেতা অং সান সু চির মুখপাত্র জ তেই জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ওইসব ধর্ষিতারা আমাদের কাছে আসুক, আমরা তাদের পূর্ণ নিরাপত্তা দেব। আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থাও নেব। তবে গত বছরের শেষ দিকে রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করার অনেক অভিযোগ প্রকাশ্য হলেও সেগুলো নিয়ে সু চি নিজে কোনো মন্তব্য করেননি।
গত অক্টোবরে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর উপর রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার ঘটনার পর সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ২৫ অগাস্টে আবার হামলার ঘটনার পর সেনাবাহিনী পাল্টা কঠোর দমন অভিযান চালাচ্ছে, যেটাকে ‘রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠী নির্মূলকরণ’ বলছে জাতিসংঘ।
এর পর থেকে সোয়া চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশের সীমান্ত জেলা কক্সবাজারের আশ্রয় নিয়েছে।
রয়টার্স এমন আটজন স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্গে কথা বলেছে, যারা অগাস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে ২৫ জনের বেশি ধর্ষিতা নারীকে চিকিৎসা দিয়েছেন।
ওই চিকিৎসকরা বলছেন, তাদের রোগীদের নিয়ে কি করা হয়েছিল তা সুনির্দিষ্টভাবে বের করার চেষ্টা তারা করেননি। কিন্তু ওই ঘটনাগুলোতে তারা ‘নির্ভূল ছাঁচ’ দেখতে পেয়েছেন। অনেক নারীর শরীরে তারা আঘাতের নমুণা দেখেছেন, যেগুলোর জন্য তারা একবাক্যে মিয়ানমারের সেনাদেরকে দায়ী করেন।
স্পশর্কাতর হওয়ায় কোনো রাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগের বিষয়ে জাতিসংঘ ও সাহায্য সংস্থাগুলোর চিকিৎসকদের মুখ খোলার ঘটনা বিরল।
কক্সবাজারের লেদা শরণার্থী শিবিরে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) পরিচালিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকরা বলছেন, তারা শত শত জখমি রোহিঙ্গা নারীকে চিকিৎসা দিয়েছেন, যারা গত অক্টোবর ও নভেম্বরে রাখাইনে সেনা অভিযানে নৃশংস যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির সমন্বয়ক ড. নিরন্ত কুমার বলছেন, অগাস্ট থেকে আসা রোহিঙ্গা ঢলের মধ্যে এখন পর্যন্ত ধর্ষণের খবর আগের তুলনায় কম পাওয়া গেলেও এর মধ্যে যারাই চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের জখমগুলি ‘বেশি সহিংস’ হামলার নজির বহন করে।
বেশ কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী বললেন, অক্টোবরের অভিযানের সময় অনেক শুরুতে অনেক নারী গ্রামে রয়ে গিয়েছিলেন এটা ভেবে যে, সেনাবাহিনী শুধু রোহিঙ্গা পুরুষদের খুঁজছে। কিন্তু এবার মিয়ানমার সেনাদের চিহ্ন দেখামাত্র তাদের বেশিরভাগ ঘর ছেড়ে পালান।
লেদা ক্লিনিকের চিকিৎসকরা পরিচয় গোপন রেখে তিন রোগীর নথি দেখিয়েছেন রয়টার্স প্রতিবেদককে। তাদের মধ্যে ২০ বছর বয়সী এক নারী ১০ সেপ্টেম্বর চিকিৎসা নেওয়ার এক সপ্তাহ পর বলেন, যে তাকে এক মিয়ানমার সেনা ধর্ষণ করেছিল। তাকে ধর্ষণের আগে মিয়ানমার সেনারা তার চুল ধরে টেনেছিল’ এবং তাকে ‘বন্দুক দিয়ে পেটান’।
চিকিৎসকরা বলছেন, অনেক পরীক্ষায় এমন ক্ষত পাওয়া গেছে, যেগুলোতে বলপূর্বক যোনিকে পুরুষাঙ্গ ঢোকানো, পেটানো এবং কোনো কেনো ক্ষেত্রে উদ্দেশ্যমূলকভাবে নারীর যৌনাঙ্গ কেটে ফেলার চেষ্টা হয়েছে বলে ধরা পড়েছে।
আইওএমের চিকিৎসা কর্মকর্তা ড. তাসনুবা নওরিন বলেন, “আমরা চামড়ায় এমন দাগ দেখেছি, যেগুলো খুবই জোরালো আঘাত, অমানবিক আঘাত। ”
নতুন আসা এসব রোহিঙ্গা নারীর মধ্যে অন্তত পাঁচজনকে তিনি চিকিৎসা দিয়েছেন, যাদের সম্প্রতি ধর্ষণ করা হয়েছে তার মনে হয়েছে। তাদের সবার ক্ষেত্রে ঘটনার বর্ণনার সঙ্গে তাদের শরীরে আঘাতের আলামতের মিল পাওয়া গেছে।
কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের কাছের এক ক্লিনিকে কর্মরত এক আইওএমের এক চিকিৎসক বলেন, অগাস্টের শেষে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা এক নারী বলেছেন, তাকে অন্তত সাতজন সৈনিক মিলে ধর্ষণ করেছে।
Theme images by Jason Morrow. Powered by Blogger.